স্টিভ জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান ২০১১ সালের আগস্টে। সে সময় হংকংয়ের ১৯ বছর বয়সী জোনাথান মাক লং অ্যাপলের লোগোর কামড় দেওয়া অংশে বসিয়ে দেন স্টিভ জবসের অবয়ব। অ্যাপলে যে জবসের অভাব পূরণ হওয়ার নয়, তা-ই বুঝিয়েছিলেন তিনি। এর মাস দেড়েকের মধ্যে মারা যান জবস। ছবিটি তখন দ্বিতীয় দফায় ভাইরাল হয়।
জোনাথান মাকের সে ছবির ব্যাখ্যা নাহয় পাওয়া গেল। তবে অ্যাপলের মূল লোগোটি দেখুন। বেশ সাধাসিধে এক আপেল। ডান দিকটাতে যেন কেউ কামড় বসিয়েছে। তবে তাতে তেমন কোনো গূঢ় অর্থ লুকানো নেই। কেবল অন্যান্য ফল থেকে আপেলকে আলাদা করার চেষ্টা ছিল।
অ্যাপলের প্রথম লোগোটি ছিল হাতে আঁকা। এক আপেলগাছের নিচে বসে আছেন ইংলিশ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। স্টিভ জবস চেয়েছিলেন অ্যাপলের সব কম্পিউটারে প্রতিষ্ঠানটির লোগো যুক্ত থাকবে। আর সে কাজের জন্য সাধাসিধে একটি লোগোর দরকার ছিল তাঁর।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোগোর জন্য এক বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্টিভ জবস। কাজটির জন্য নিযুক্ত হন রব জ্যানোফ। ১৯৭৭ সালের ঘটনা। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপলের বয়স তখন সবে এক বছরের কাছাকাছি।
লোগো কেমন হতে হবে, কিসে প্রাধান্য দেওয়া হবে, এসব নিয়ে জ্যানোফকে তেমন কিছু বলেননি স্টিভ জবস। কেবল বলেছিলেন, ‘ডোন্ট মেক ইট কিউট।’ এরপর কাজ শুরু করে দেন জ্যানোফ। তিনি চেয়েছিলেন লেখার বদলে ছবিভিত্তিক লোগো নকশা করতে।
সে সময় এইচপি বা আইবিএমের মতো বড় কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোগোতে টাইপোগ্রাফিকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। অ্যাপলের ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু চেয়েছিলেন তিনি।
শুরুতেই সাধাসিধে আপেলের কথা মাথায় আসে জ্যানোফের। সঙ্গে থাকবে একটি পাতা। তবে একই আকৃতির অন্যান্য ফলের সঙ্গে লোকে মিলিয়ে ফেলতে পারে বলে মনে হয়েছিল তাঁর। পাশাপাশি অন্য কিছুর ছবি না থাকলে লোগোতে আপেলের আকার দেখে বোঝার উপায়ও থাকবে না। বিশেষ করে চেরির কথা মাথায় ছিল তাঁর। নিজের ওয়েবসাইটে সে কথা নিজেই জানিয়েছেন জ্যানোফ। আর তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। তখন কী আর তিনি ভেবেছিলেন অ্যাপল এত বড় প্রতিষ্ঠান হবে আর লোগোটি এভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে!
যাহোক, সমস্যার সমাধান করতেই আপেলে ‘কামড়’ যুক্ত করেছিলেন রব জ্যানোফ। এতে যেকেউ লোগোটি প্রথমবার দেখেই বুঝতে পারবে সেটি আপেল, অন্য কোনো ফল নয়। এরপর সেটি স্টিভ জবসের সামনে উপস্থাপন করলে প্রথম দেখায় তিনি নকশাটি অনুমোদন করেন বলে কথিত আছে।
জ্যানোফের নকশা করা সেই লোগোটিই অ্যাপলে এখনো ব্যবহার করা হয়। তবে ভিন্ন সংস্করণে। প্রথম সংস্করণে অ্যাপলের লোগোতে ছয়টি রঙের ডোরা ছিল। সেটা স্টিভ জবসের ইচ্ছায়। তিনি চেয়েছিলেন অ্যাপলের তৈরি কম্পিউটারে যে রঙিন ছবি দেখা যায়, তা লোগোতেও থাকুক। মানুষের মনে প্রভাব ফেলুক। কারণ, সে সময়ের অন্যান্য কম্পিউটারে রঙিন ছবি দেখা যেত না। এরপর বিভিন্ন সময় লোগোতে টুকটাক পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবে আকৃতি বদলায়নি।